এস এম শাহাদাত বিশেষ প্রতিনিধিঃ
সাতক্ষীরার কালিগঞ্জে ভাইরাসে আক্রান্ত বাগদা চিংড়ি ঘের পরিদর্শন ও চাষীদের সাথে মতবিনিময় করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অনুজা মন্ডল। সোমবার (৭ এপ্রিল-২৫) বেলা ১২ টায় শ্রীকলা যুব উন্নয়ন সোসাইটি কার্যালয়ে মতবিনিময় সভায় তিনি বলেন পরিকল্পনা মাফিক ঘের পরিচর্যা থেকে শুরু করে মৎস্য চাষ করলে চাষি কম ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আপনাদের সঠিক পদ্ধতিতে মাছ চাষ করতে হবে। সেলক্ষে আপনাদের কাজ করতে হবে।
তিনি বলেন কোন কিছু বুঝে উঠার আগে প্রায়ই ঘেরে বাগদা চিংড়ী মারা যাচ্ছে। চাষীরা প্রতিকার করার কোন সময় পাচ্ছেনা আবার কোন ঔষধেও কাজ হচ্ছেনা, মাছ মরে পঁচে যাচ্ছে। একারনে আমি শ্রীকলা, তুলাকাটি ও দক্ষিন শ্রীপুর এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত মৎস্যঘের পরিদর্শন ও আপনাদের সাথে মতবিনিময় করতে এসেছি।কিন্তু আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, একটি ঘেরে মাছ মরছে, সেই ঘেরের পানি ও দুর্গন্ধ ছড়ানো মাছসহ নালা বা খালে ফেলছেন। ঐ বিষাক্ত ও জীবানুযুক্ত পানি অন্য মৎস্যঘেরে উঠাচ্ছেন। ফলে নতুন নতুন ঘের ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছে চাষীরা সর্বশান্ত হচ্ছে। এজন্যে আমাদের সচেতন হতে হবে এবং প্রশিক্ষণ গ্রহন করতে হবে। আমি খুব দ্রæত আপনাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করবো। অবশ্যই আপনারা উপকৃত হবেন।মতবিনিময় কালে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা সিনিঃ মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ তৌকির আহমেদ, কালিগঞ্জ প্রেসক্লাবের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এম হাফিজুর রহমান শিমুল, সিনিঃ সদস্য মোঃ ইশারাত আলীসহ শতাধিক মৎস্য চাষী ও সূধীবৃন্দ। কালিগঞ্জ উপজেলার ১২টি ইউনিয়নের অধিকাংশ বিলে বাগদা ঘেরে মৌসুমের শুরুতে চিংড়ী মাছে মড়কের ফলে উপজেলায় বাগদা চাষীদের মারাত্বক লোকসানের মুখে পড়েছে। চাষীরা চরম হতাশ এবং ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। উপজেলা মৎস্য অফিস সুত্রে জানাগেছে, প্রায় ১৫ হাজার ঘেরের আয়তন ১৬"শ হেক্টর। এবছরে সাড়ে ৬ হাজার মেট্রিক টন চিংড়ী মাছ উৎপাদন হওয়ার কথা। সে হিসেবে হেক্টর প্রতি ৪'শ কেজি বাগদা উদপাদন লক্ষ্যমাত্রা চাষীদের। কিন্তু এবার মৌসুমে বড় ধরনের ধাক্কা খেলো বাগদা চাষীরা। সেকারনে কালিগঞ্জ উপজেলায় বাগদা উৎপাদন লক্ষ মাত্রা অর্জন সম্ভব হবেনা সেকারনে চাষীরা মারাত্বক আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়বে।
শ্রীকলা গ্রামের মৎস্যচাষী মহব্বত আলী বলেন, আমাদের ঘের ভাইরাসে আক্রান্ত, মাছ মরেছে গেছে। তরপরেও আমাদের ঘেরে পানি উঠানামার খাল মুক্ত নয়। দখলবাজরা দখল কওে আছে। পানি প্রবাহ উন্মুক্ত করা না হলে আমাদের ঘেরে প্রয়োজনীয় সময় আমরা ঠিকমতো পানি উঠানামা করতে পারবোনা। সিংহের মেদে বড়খাল, ঘোজা ডাঙ্গা খাল ও মদিনার দরগাহ খাল অবমুক্ত হলে এলাকার ৩০ টি বিলের ৫ হাজার বাগদা চিংড়ী চাষী বেঁচে যাবে।
এসময় সকল মৎস্য চাষী নির্বাহী কর্মকর্তা অনুজা মন্ডল এর কাছে খাল অবমুক্ত করার দাবী জানান। নির্বাহী কর্মকর্তা অনুজা মন্ডল মৎস্য চাষীদের কথা মনোযোগ সহকারে শোনেন।
শ্রীকলা, ঠেকরা রহিমপুর, তুলাকাটি, দক্ষিণ শ্রীপুর, বেড়াখালী সহ আশপাশের দুইশত মৎস্য চাষীদের মধ্যে আব্দুর রহমান বলেন আমাদের খাল অনেক সরু হয়ে গেছে। আমাদের খাল খনন করে পানি উঠানামার সঠিক ব্যবস্থা করা হয় তবে বর্ষার সময় জলাবদ্ধতা হবেনা এবং মৎস্য ঘের ডুবে যাবেনা। আমরা উন্মুক্ত পরিবেশে বাগদা চিংড়ী চাষ করতে চাই। আপনারা আমাদের সেই পরিবেশ করে দেন। আপনি নিজে দেখেছেন মাছ মরার দৃশ্য। আমরা এভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলে বাগদা চিংড়ী চাষ করতে পারবোনা।কাজী আব্দুল হালিম বলেন আমি দীর্ঘদিন ধরে ঘের করছি। স্যার আমাদের সঠিক প্রশিক্ষণ ও সহযোগিতার ব্যবস্থা করে দেন যাতে আমরা ঋণগ্রস্ত না হই। আমাদের শতভাগ ঘের ভাইরাসে আক্রান্ত এবং আর্থিকভাবে চরম ক্ষতিগ্রস্ত। এসময় উপজেলা সিনিঃ মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ তৌকির আহমেদ বলেন, আমরা আপনাদের ঘেরের পানি ও মাটি পরীক্ষা করবো। পাশাপাশি আপনাদের পাশে থেকে যাতে আপনারা বাগদা চিংড়ী চাষ করে লাভবান হন সে ব্যাপারে সচেষ্ট থাকবো। কালিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার অনুজা মন্ডল মৎস্য চাষীদের সাথে মতবিনিময় কালে বলেন আমরা আপনাদের পাশে রয়েছি। আপনাদের প্রশিক্ষনের ব্যবস্থা করবো। খালের পানি যাতে অবাধে প্রবাহিত হয় সেব্যাপারে আমি পদক্ষেপ নেব। সিংহের মেদে খাল দিয়ে যাতে অবাধে পানি উঠানামা করতে পারে সে লক্ষে একটি কালভাট অবশ্যই করা হবে। আপনারা আশাহত হবেননা। আপনারা জাতীয় উন্নয়নে সরাসরি অবদান রাখছেন। একারনে আপনাদের সমস্যার সমাধান আগে সমাধান করার চেষ্টা করবো। সাথে সাথে খালের পানি যাতে অবাধে উঠানামা করতে পারে সেলক্ষে কাজ করবো।
0 coment rios: